সবাই আমাদের customer নয়। আমাদের সবাইকে ধরে ধরে বিক্রি করা উচিতও নয়।
একজন ব্যবসায়ীর উচিত সে যে product টা বিক্রি করছে সেটার প্রকৃতি খুব ভালোভাবে জানা। কারণ ওই প্রকৃতিই সেই একই প্রকৃতির মানুষকে আকৃষ্ট করবে। অন্য প্রকৃতির লোকেরা কিন্তু সেই product টা কিনতে খুব একটা আগ্রহী হবেনা।
- আমাদের product কার জন্য সবচেয়ে বেশি সমাধান দিচ্ছে?
- আমাদের product টা কার সবচেয়ে বেশি দরকার?
এই ধরণের কিছু মৌলিক প্রশ্ন আমরা যদি করি তাহলে আমাদের product এর প্রকৃতি সন্মন্ধে একটা ধারণা তৈরী হবে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে “সবচেয়ে বেশি” এই কথাটা ওপর জোর দেয়ার কথা।
সবাইকে বিক্রি করার চেষ্টা করাটা অনেকটা গোল গোল করে ঘোরার মতো। আমরা চলছি ঠিকই কিন্তু কোথাও পৌঁছোচ্ছিনা।
ধরা যাক, আমাদের জুতোর ব্যবসা। আমরা জুতো বিক্রি করছি। জুতোগুলোর দাম আমরা খুব কম রেখেছি যাতে সবাই আমাদের জুতো কিনতে পারে। আমরা ভাবছি, দাম সস্তা রাখলে সবাইকে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু আমাদের customer রা এইভাবে ভাববে না।
উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা আমাদের জুতো কিনতে চাইবে না কারণ তারা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর জুতোর brand গুলো নিয়েই বেশি আগ্রহী। তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেটা quality এর জন্য হতে পারে আবার show off এর জন্যও হতে পারে। এমনকি আমরা যদি সেই brand গুলোর মতো একই মানের জুতো বানাই তাও আমাদের খুব একটা লাভ হবে না। তারা আমাদের বিশ্বাস করতে পারবেনা। একে brand value বলে। বিশ্বাস তৈরী হয় brand দিয়ে। ব্যবসায় brand তৈরি করতে সময় এবং টাকা দুটোরই প্রয়োজন।
আচ্ছা তাহলে কি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা আমাদের জুতো কিনতে পারে? হ্যা পারে। আবার তারা চাইলে আর একটু বেশি দামের জুতোও কিনতে পারে। তাদের কাছে এই বিকল্পটা আছে। যেটা আমাদের পক্ষে ক্ষতিকারক। প্রথমে তো তারা কেন কম দামে জুতো কিনবে সেটা তাদের বোঝাতে হবে। তারপরে তাদেরকে বোঝাতে হবে যে তারা কেন আমাদের কাছ থেকেই জুতো কিনবে।
বোঝাই যাচ্ছে যে এখানে বিক্রি করার থেকে বোঝানোর প্রক্রিয়াটা বেশি জটিল আর সময়সাপেক্ষ। এই ক্ষেত্রে product আর customer এর মধ্যে কোনো স্বাভাবিক সমন্বয় তৈরী হচ্ছেনা। আমি বলছিনা যে তাদেরকে বিক্রি করা যাবেনা। আমি বলছি তারা স্বাভাবিক ভাবে আমাদের জুতো কিনবে না।
অবশেষে, আমাদের কাছে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোক রয়েছে। যারা স্বাভাবিকভাবে কম দামেরই জুতো কিনবে। সুতরাং, budget অনুযায়ী এটা একটা স্বাভাবিক সমন্বয় হয়েছে। এবার সেই লোকদের মধ্যে কারা কারা আমাদের জুতো কিনবে? অবশ্যই এমন লোকেরা যারা আমাদের জুতোর দোকানের আসে পাশে থাকে। আমাদের যদি website থাকে তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার। সেটা বাদ দিলাম। তাহলে এইটুকু বোঝা গেল যে আমাদের দোকানের আসে পাশে থাকা নিম্নবিত্ত শ্রেনীর লোকেরাই হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক customer।
এখন আরও গভীরে গিয়ে চিন্তা করা যাক।
- সেই লোকেদের মধ্যে কারা চটি না কিনে জুতো কিনবে?
- তারা কোথায় থাকে?
- তাদের বয়স কি?
- পেশা কি?
- ছেলে না মেয়ে?
যত বেশি গভীরে যাবো তত আমরা আমাদের চোখের সামনে তাদের একটা পরিষ্কার ছবি দেখতে পাবো। একে buyer persona বলা হয়।
আমরা যদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে একটা buyer persona তৈরী করতে পারি তাহলে রাস্তায় চলতে চলতে, লোকের সাথে কথা বলতে বলতে আমরা আমাদের customer দের সনাক্ত করতে পারবো।
জুতো বিক্রি করার জন্য কার কাছে যাবো, কোথায় বিজ্ঞাপন করতে হবে এইসব প্রত্যেকবার বসে ভাবতে হবেনা। আমরা অনেক সহজে ব্যবসাটাকে চালাতে পারবো। ব্যবসার অনেক কঠিন কাজ খুব সহজ হয়ে যাবে।
তাছাড়া আমরা buyer persona অনুযায়ী customer দের স্বাদ অনুসরণ করে আমাদের product এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন করতে পারবো। যে বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পছন্দ হতে পারে। এরপর এমন সময় আসবে যখন আমাদের product নিজেই নিজেকে বিক্রি করতে পারবে। আমাদের customer দের পছন্দ অনুযায়ী product তৈরী হলে অবশ্যই তারা কিনতে আগ্রহী হবে। কেনবার জন্য বেশি জোর করতে হবেনা। একে বলা হয় product positioning।
এইসব জিনিসগুলো খুব একটা কঠিন না যদি আমরা ঠিক করে শিখি আর ব্যবসায় প্রয়োগ করি। আগামী দিনের যাত্রা শুভ হোক।